সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

এক মাছের দাম ৯০ হাজার টাকা!

এক মাছের দাম ৯০ হাজার টাকা!
দুইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার এই মেলা বসে। এবারো বসেছিল। তবে, অতীতের মত জমেনি এবারের মেলা। যাত্রা, জুয়া, হাউজি, পুতুল নাচ না থাকার কারণেই নাকি মেলা জমেনি! তবে, অতীতের মত এবারো বড় বড় মাছের আমদানি হয়েছিল মেলায়। যদিও ক্রেতা কম থাকায় মাছ বিক্রেতারা হতাশ।
মেলার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় বাঘাইড় মাছটির ওজন ছিল ৬০ কেজি। বিক্রেতা মাছটির দাম হাঁকিয়েছিলেন ৯০ হাজার টাকা। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাছটির দাম উঠেছিল ৭২ হাজার টাকা। গত বছর মেলায় ১০০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ আমদানি হয়েছিল।
এদিকে বাঘাইড়ের পাশাপাশি বিশাল বিশাল রুই-কাতলা-বোয়াল মাছ আমদানি হয়েছে মেলায়। বিক্রেতা ২৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ দাম হাঁকিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাছটির দাম উঠেছিল ২২ হাজার টাকা। গত বছর হরতাল অবরোধ উপেক্ষা করে হাজার হাজার লোক সমাগম হলেও এবার মেলায়  লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। একারনে মাছের জন্য বিখ্যাত এই মেলায় এবার মাছও উঠেছে অনেক কম।
জানা গেছে, এবার মেলায়  জুয়া, বিচিত্রানুষ্ঠান ও পুতুল নাচের নামে অশ্লীল নাচ ছাড়াও সব ধরনের অশ্লীলতার আয়োজন বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে গাবতলী মডেল থানার পুলিশ মেলা ও তার আশেপাশ থেকে কমপক্ষে ২০টি জুয়া, বিচিত্রানুষ্ঠান, পুতুল নাচের আয়োজন বন্ধ করে দেয়। একারনেই এবছর মেলায় লোক সমাগম কমেছে বলে স্থানীয়রা বলছেন।

গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে পোড়াদহ নামকস্থানে বটগাছ তলায় প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে প্রায় দুই’শ বছর আগে থেকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের মতো মেলার পার্শ্বে পশ্চিম মহিষাবান মধ্যপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে ২১তম বউমেলা। এই মেলায় কোন পুরুষ প্রবেশের অনুমতি পাবেনা। শুধুমাত্র মেয়েরাই মেলায় অংশ নিবে।
মেলাকে কেন্দ্র করে গাবতলীর অর্ধশত গ্রামে উৎসবের আমেজা বিরাজ করছে। মাঘের শেষ বুধবার একদিনের মেলা হলেও এখন চলে তিনদিন। মেলায় মাছ ছাড়াও আছে রকমারি মিষ্টি, কাঠ এবং স্টিলের তৈরী বিভিন্ন আসবাবপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, নাগরদোলা ও ঘুরনিসহ অন্যান্য দোকান। এলাকাবাসী জানান, ধনী-গরীব সবাই মেলা থেকে সাধ্য অনুযায়ি মাছ ও মিষ্টি কেনেন। রেওয়াজ অনুযায়ী বাড়ির গৃহীনিরা মেলার আগের দিন  ১০ সের ধানের মুড়ি ভাজেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এ মেলা একটি সেতুবন্ধন। রেওয়াজ অনুসারে বুধবার মেলা থেকে জামাইরা বড় মাছ, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যান। শ্বশুর-শাশুড়িরাও জামাইকে দেন সেলামি হিসেবে খাট, আলমারিসহ বিভিন্ন গৃহসামগ্রী। এবার সাইফুল ইসলাম মন্ডল নামের একজন ইজারাদার মেলাটি পরিচালনার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়েছেন।
গাবতলী মডেল থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ জানান, মেলায় আইন শৃংখলা ও শান্তি রক্ষার স্বার্থেই জুয়া-পুতুল নাচসহ সবধরনের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন